জালাল আহমদ :

বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ বাক্য আছে, ‘অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে সে গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়। ‘ এই প্রবাদটি যে-ই প্রথম বলুক, এটি কোরআন-হাদিসের সঙ্গে মিলে যায়। পবিত্র কোরআন-হাদিসের ভাষ্যমতে, যারা অন্যের অকল্যাণ চায়, অন্যকে ফাঁসিয়ে নিজেকে বড় করতে চায়, মহান আল্লাহ তাদের ওপর নারাজ হন।

শেখ হাসিনা গত ১৬ বছরে অন্যকে ফাঁসানোর জন্য এরকম বহু গর্ত তৈরি করেছেন।শেষ পর্যন্ত সেই সব গর্তে তিনি নিজেই পতিত হয়েছেন।

শুরুতে টের পাওয়া গিয়েছিল বাকশালের দিকে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ:

ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, Morning Shows the Day অর্থাৎ প্রত্যুষেই বোঝা যায় দিনটি কেমন যাবে। এই প্রবাদের আলোকেই ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের কে অসহিষ্ণু এবং স্বৈরাচার বলে মনে হচ্ছিল।

রাজনীতিতে সম্পূর্ণ নতুন ডাক্তার দীপু মনির মতো নবনির্বাচিত এমপি কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানানো, রাস্তার গায়িকা মমতাজকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি বানানো, মাহবুবুল আলম হানিফ কে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বানানো ইত্যাদি ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হচ্ছিল শেখ হাসিনা তার পিতা শেখ মুজিবের মত বাকশাল তৈরি করতে যাচ্ছে। দিনবদলের প্রত্যাশা জাগিয়ে যারা নজিরবিহীন (!) ভোট পেয়ে সরকার গঠন করল, তারা ‘দিন কে রাত’ করতে শুরু করল।

ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মাথায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ৫৭জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। এটা কোনো যুদ্ধ নয়, ষড়যন্ত্রমুলক এক বিদ্রোহ। যে বিদ্রোহ দমন করার আন্তরিক কোনো প্রয়াস ছিল না সরকারের।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচ্চতর প্রশাসনে দলীয় অনুগতদের আসীন করা হয়েছে দ্রুততম সময়ে। সিভিল প্রশাসনে ওএসডি করার হিড়িক পড়েছিল। থানার ওসি ও সেকেন্ড অফিসার সহ পুলিশ প্রশাসনের সর্বত্র দলীয় লোকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।

হল দখল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল, বাড়ি দখল, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে খুন-জখম করা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল । কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সহ কলেজের ভর্তি পরীক্ষা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। কলেজগুলোতে অধ্যক্ষরা চরম অসহায় অবস্থায় মধ্যে পড়েছিল।ছাত্রলীগ যেভাবে বলেছে, সেভাবে ভর্তি করিয়েছে। ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির সময় প্রশাসনের দেওয়া তালিকা ছিড়ে ফেলে ছাত্রলীগ নিজেদের তালিকা তৈরি করেছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অকপটে বলে ফেলেছিলেন, “যারা আমাকে এই চেয়ারে বসিয়েছেন, তাদের জন্য তো একটা কিছু করতে হবে। আসলে তার উপলব্ধি করার ক্ষমতা নেই যে, ওই চেয়ারটি আসলে তার নয়। তিনি নিছক সাক্ষীগোপাল মাত্র।”

যেভাবে বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ির লীজ বাতিল করা হয় :

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দুর্বার গতিতে যাত্রার ৯৩তম দিবসে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে সিদ্ধান্ত ন্যক্কারজনক, চরম নিন্দনীয় এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতায় নজিরবিহীন। সিদ্ধান্তটি হলো, বিএনপি চেয়ারপারসন এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে ঢাকা সেনানিবাসে শহীদ মইনুল রোডে যে বাড়িটি দেয়া হয়েছিল লিজ ডকুমেন্ট সম্পাদন করে, সেই লিজ বাতিল।

সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয় ৮ এপ্রিলের মন্ত্রিসভার বৈঠকে। সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন নিয়মমাফিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংবাদপত্র সূত্রে জানা গেছে যে, কেবিনেট মিটিংয়ের নির্ধারিত আলোচ্যসুচিতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ৮ এপ্রিল মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে সরকারি জলমহাল বরাদ্দ সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া পর্যালোচনাই ছিল একমাত্র এজেন্ডা। বিবিধ আলোচনার সময় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ আবদুল আজিজ খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ির বরাদ্দ বাতিলের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে আরো জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ির বরাদ্দ বাতিলের পক্ষে মত ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “আমার ঢাকায় কোনো বাড়ি না থাকায় গণভবন বরাদ্দ নিয়েছিলাম। আমার ছোট বোনকেও একটি বাড়ি বরাদ্দ দিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তী সরকার আমাদের নামে নেয়া বাড়ি দুটির বরাদ্দ বাতিল করে দেয়। আমার নামের বাড়ির বরাদ্দ বাতিল হবে আর ওনার নামে নেয়া বাড়ির বরাদ্দ থাকবে-এক দেশে দুই নিয়ম চলতে পারে না।”

নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী এক দেশে দুই নিয়ম চলতে পারে না, চলতে দেয়া উচিত নয়। তাঁর এই নৈতিক ও আইনগত অবস্থানের সঙ্গে দ্বিমত পোষণের কোনো সুযোগ নেই।কিন্তু প্রশ্ন হলো, আসলেই কি দুই নিয়মের কোনো বিষয় এখানে আছে? বেগম খালেদা জিয়াকে যখন বাড়িটি বরাদ্দ দেয়া হয়, তখন তিনি ক্ষমতাসীন ছিলেন না। তিনি দরখাস্ত করে বরাদ্দও চাননি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা যেভাবে নিজে সভাপতিত্ব করে মন্ত্রিসভার মিটিংয়ের মাধ্যমে নিজ নামে বাড়ি বরাদ্দ করিয়ে নিয়েছেন, সে রকম কোনো কাজও বেগম খালেদা জিয়া করেননি। তাহলে এক দেশে দুই নিয়ম হলো কী করে?

২০০১ সালে বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনার বরাদ্দ প্রাপ্ত বাড়ি বাতিল করেছিলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সরকার তাদের বাড়ি বাতিল করেন নি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, যিনি কখনো কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি এবং নির্বাচনী আইন অনুযায়ী যে কটি আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যায়, তার সবকটি আসনেই যিনি জয়লাভ করেছেন এবং যিনি তৎকালীন সময়ে বিরোধীদলীয় নেতা, তার বাড়ি বরাদ্দের লিজ বাতিলের মতো রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপুর্ণ একটি সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় হবে অথচ আগে এ সম্পর্কে কোনো ঘোষিত এজেন্ডা নেই, এ থেকেই অনুমান করা যায় অসৎ অভিপ্রায় থেকেই এটি করা হয়েছে।

এজেন্ডায় যদি কোনো বিষয় উল্লেখ না থাকে এবং বিষয়টি যদি জনগুরুত্বপুর্ণ হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর সহকর্মীরা আগেই চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ পাবেন কী করে?অনুমান করা যায়, রাজা কেনিউটের পারিষদের মতো বাকি মন্ত্রীরাও প্রধানমন্ত্রীকে জোর সমর্থন জানিয়েছেন।

গণভবন কি শহীদ মইনুল রোডের বাড়িটির সঙ্গে কোনোক্রমে তুলনীয় হতে পারে? গণভবন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের একটি অতি গুরুত্বপুর্ণ প্রতীক। বঙ্গভবন আরো অধিক মর্যাদাপুর্ণ প্রতীক। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের পরিচয়বাহী এসব ভবন ও স্থাপনা বিনিময়যোগ্য নয়। নয় হস্তান্তরযোগ্য। আমেরিকার হোয়াইট হাউস কি দোর্দন্ড প্রতাপ প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ নিজ নামে লিখে নিতে পারতেন? দশ নম্বর ডাউনিং ষ্ট্রিটের বাড়িটি কি কোনো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নিজ নামে লিখে নিতে পারেন? মস্কোর ক্রেমলিন প্রাসাদটি কি প্রেসিডেন্ট পুতিন তার নামে হস্তান্তর করাতে পারতেন? এই সামান্য বোধশক্তিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হারিয়ে ফেলেছিলেন।

শহীদ মইনুল রোডের বাড়িটি পাকিস্তান আমলে একজন লে. কর্ণেল পদমর্যাদার অফিসারের বাসভবন ছিল। শহীদ জিয়া সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব ষ্টাফ নিযুক্ত হলে এই বাড়িটি তার বাসভবন হিসেবে বরাদ্দ পান। পরে তিনি চিফ অব ষ্টাফ হয়েছেন, রাষ্ট্রপতি হয়েছেন; কিন্তু এই বাড়িটি ছেড়ে আরো উন্নতমানের কোনো বাড়ি বা বঙ্গভবনে বসবাসের কথা তিনি ভাবেননি। এটা ছিল তার বিনম্র মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।

৩০ মে ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি যখন শহীদ হলেন, তখন দেখা গেল তার স্ত্রী এবং দুই সন্তানের মাথা গোঁজার মতো কোনো ঠাঁই নেই। নেই কোনো সহায়-সম্বল। রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও জিয়া তার নির্ধারিত বেতন ও পারিতোষিকের মধ্যেই কৃচ্ছতার সঙ্গে দিনযাপন করেছেন। তার ব্যক্তিগত সততা ও সাহস ছিল প্রশ্নাতীত। তিনি ছিলেন সব ধরনের স্বজনপ্রীতি থেকে মুক্ত। তার অন্তিমযাত্রা ছিল স্মরণকালের বৃহত্তম এবং শোকবিহ্বল লাখো মানুষের কলেমা শাহাদাত ধ্বনিতে মুখর।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্নজন জিয়া পরিবারকে জমি ও বাড়িঘর দানের প্রস্তাব দিল। সেসব প্রস্তাবে বেগম খালেদা জিয়া কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন; কিন্তু সেসব প্রস্তাব গ্রহণ করে বিষয়সম্পদের প্রতি মোহ প্রদর্শন করেননি।।

পরে সংসদে বিস্তারিত আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের ওই বাড়িটি দলিলমুলে রেজিষ্ট্রির মাধ্যমে বরাদ্দ দেয় ওই সময়ের সরকার। একজন মহান মুক্তিযোদ্ধা, যার স্বাধীনতার ঘোষণায় দিশেহারা জাতি পথচলার দিশা খুঁজে পায় এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তার পরিবারকে যদি কৃতজ্ঞ জাতি একটি বাড়ি উপহার দেয় এবং প্রতিশোধপরায়ণ একটি সরকার যদি এক কলমের খোঁচায় সেই উপহারটি কেড়ে নেয়, তাহলে এর চেয়ে হীনতা ও নিচতা আর কী হতে পারে!

আওয়ামী লীগ একুশ বছর পর ক্ষমতায় এসে ১৯৯৬-২০০১ পর্বে চেষ্টা করেছিল বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি কেড়ে নেয়ার। কিন্তু ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কাজটি বেআইনি হবে ‘মত’ দেয়ার ফলে সে সময় আওয়ামী লীগ সরকার এই অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারেনি।২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে কোনো মুল্যে এই সরকারকে রক্ষা করার রণহুঙ্কারে বলীয়ান হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে পড়েছিল। যা মনে এসেছে, এরা তা-ই করেছে।

শেখ হাসিনাকে ভগ্নি দাবিকারী সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ তার ভগ্নির মন ভেজানোর জন্য বলেছেন, তিনি যদি জানতেন এ বাড়িতে থেকে বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন তাহলে তিনি এ বাড়ি বরাদ্দ দিতেন না। তিনি বরাদ্দ দেয়ার কে? বরাদ্দের প্রস্তাব পাস করেছিল তৎকালীন সংসদ দলমত নির্বিশেষে। বেগম খালেদা জিয়া তো ওই বাড়ি রাজনীতির কাজে ব্যবহার করেননি।আবেগ আপ্লুত খালেদা জিয়া স্বামীর স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে ওই বাড়িতে বসবাস করার ফলে বরং তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। এমনও সময় গেছে, যখন তার শুভানুধ্যায়ীরা ওই বাড়ির গা ঘেঁষতে পারেননি। তাহলে রাজনীতি হলো কীভাবে?

ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বাড়ি আছে অনেক বেসামরিক এবং সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নেয়া ব্যক্তির। এদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে জড়িত। এদের একজন তো তৎকালীন মন্ত্রিসভারও সদস্য ছিলেন। দলীয় রাজনীতি সংশ্লিষ্টতার জন্য তাদেরও কেন ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে বের করে দিলেন না?

উচ্ছেদের কোন কারণ ছিল না :

সংসদে শেখ হাসিনা বলেছেন, “বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনের জমির ওপর বহুতল ভবন নির্মাণ করে বিডিআর বিদ্রোহে শহীদ সেনা অফিসারদের পরিবারবর্গকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া হবে। প্রতি পরিবার পাবে দুটি করে ফ্ল্যাট। একটি তাদের নিজেদের থাকার জন্য, অন্যটি ভাড়া দিয়ে সাংসারিক ব্যয় নির্বাহের জন্য।”

ভবিষ্যতে সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা যদি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তাহলে কী হবে? একসঙ্গে এতগুলো ফ্ল্যাটে অনেকেরই রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।

শহীদ পরিবারগুলোর জন্য ঢাকা শহর কিংবা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরেই জায়গার কোনো অভাব থাকার কথা নয়। আসল কথা হলো, তাদের বসবাসের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এসব পরিবারের সদস্যরা সেনা-সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শাহাদাত বরণকারী সাবেক সেনাপ্রধানের পরিবারের জন্য যে বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তার জায়গায় নির্মিত বহুতল ভবনে বসবাস করা তারা কিছুতেই ভালোভাবে নেবে না। কারোর প্রতিহিংসার দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া তাদের জন্য সম্মানজনক বলে তারা মনে করবেন-এমনটি বিশ্বাস করা কঠিন।

আইনগতভাবে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পূর্বে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ :

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালের ৮ই এপ্রিল মন্ত্রিসভায় আইনগত ত্রুটির কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়িটির ইজারা বাতিল করে। এরপর ২০শে এপ্রিল খালেদা জিয়াকে ১৫ দিনের মধ্যে তার সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেয় সামরিক ভূমি ও সেনানিবাস অধিদপ্তর। ওই বছর ২৩শে এপ্রিল সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়ার নোটিশ পাঁচ দিনের মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সরকার, সামরিক ভূমি ও সেনানিবাস অধিদপ্তরকে উকিল নোটিশ পাঠান খালেদা জিয়া।

২৪শে মে আরেক দফা নোটিশ দেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। তিনি নোটিশটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করলে সেই বছর ২৭শে মে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ(বর্তমান প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করেছিলেন।একইসঙ্গে নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

পরে এ রুলটি শুনানির জন্য বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের বেঞ্চে পাঠানো হয়। ওই বেঞ্চের প্রতি খালেদা জিয়া ন্যায় বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করলে মামলাটি বিচারপতি মো. ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়।

পরের বছর ১৭ই এপ্রিল ও ৫ই মে এই বেঞ্চের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে খালেদা জিয়া আবেদন করলে তা খারিজ করে দেন আদালত। ১১ই এপ্রিল একই বেঞ্চে এ মামলার সময় আবেদনের শুনানিতে ব্যাপক হট্টগোল হয়। এর এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের পুলিশ ডেকে গ্রেপ্তার করার কথা বলেছিলেন হাইকোর্ট।

পরে প্রধান বিচারপতি রিট আবেদনটি শুনানির জন্য বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে পাঠান।

বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা এবং বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ ২০১০ সালের ১৩ই অক্টোবর আবেদনটি খারিজ করে দেন। ঘোষিত রায়ে খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছাড়তে কমপক্ষে ৩০ দিন সময় দিতে বলা হয়েছে।

বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি নিয়ে হাইকোর্টের ঘোষিত রায় প্রকাশিত হয়েছিল ২১ অক্টোবর । দীর্ঘ ৪০ পৃষ্ঠার রায়টি লিখেছেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা।হাইকোর্টের রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বেঞ্চের আরেক বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ।কিন্তু হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপীলের শুনানি শুরু হওয়ায় খালেদাকে এখন আর বাড়ি ছাড়তে হবে না বলে জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী টিএইচ খান৷ শুনানি ২৯শে নভেম্বর পর্যন্ত মুলতুবি হওয়ায় অন্তত সেদিন পর্যন্ত তিনি বাড়িতে থাকতে পারার কথা।

তখনো আপিল বিভাগের রায়ের পর রিভিউ বাকি ছিল।

কিন্তু এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ১২ই নভেম্বরের পর খালেদা জিয়াকে চাইলে সরকার উচ্ছেদ করতে পারবে৷ কারণ তার বাড়ি ছাড়ার নির্দেশের ওপর আপীল বিভাগ কোন স্থগিতাদেশ দেয়নি৷ আর খালেদার আইনজীবীরা স্থগিতাদেশের কোন আবেদনও করেননি৷ এরপরও খালেদা বাড়ি না ছাড়লে আদালত অবমাননা হবে৷ তার উচিত স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে দেয়া।

খালেদা জিয়াকে ১ মাসের মধ্যে সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট ১৩ই অক্টোবর৷ এই একমাস সময়সীমা উত্তীর্ণ হয়েছে ১২ নভেম্বর মধ্যরাতে৷ আর মধ্যরাত থেকেই খবর ছড়িয়ে পড়ে খালেদা বাড়ি ছাড়ছেন৷ এজন্য ২৯ মিন্টো রোডে বিরোধী দলীয় নেত্রীর সরকারি বাড়িটিও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।

উচ্চ আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পূর্বেই ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে নানা নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হয়। ফজরের নামাযের আগে সাদা পোশাকের আইন-শৃংখলা বাহিনীর লোকজন বেগম জিয়ার সেনানিবাসের চারিদিকে অবস্থান নেয়। সকাল হওয়ার সাথে সাথে তাদের সাথে যোগ দেয় পুলিশ, র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। পাশাপাশি ক্যান্টমেন্টের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর লোকজন অবস্থান গ্রহণ করে। জাহাঙ্গীর গেট সহ ক্যান্টমেন্টে প্রবেশের সকল রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সকাল আটটার দিকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর লোকজন বেগম জিয়ার বাসায় যারা কাজ করেন তারাসহ তার আত্মীয় স্বজনদের বের করে দেয়। বের করে দেয়া হয় বেগম জিয়ার বাবুর্চিদেরও। সকাল ১১টার দিকে পুলিশ ও র‌্যাব খালেদা জিয়ার বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় তারা বাড়ির ভেতর ও বাইর থেকে মাইকে বেগম জিয়াকে বের হয়ে আসতে বলে। তারা বলে, যদি বেগম জিয়া স্বাভাবিকভাবে বের হয়ে না আসেন তাহলে তারা জোর করে তাকে বের করে আনবেন। তাদের এ আহবানে বেগম জিয়া তার আইনজীবীদের সাথে কথা বলতে চান। কিন্তু উচ্ছেদকারীরা তাকে সে সুযোগ না দিয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। বেগম জিয়া তাদের কথা মত বের হতে না চাইলে পুলিশ তার রুমের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে।তারা খালেদা জিয়ার বাড়ির কর্মরত লোকজনদের আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এরপর ইচ্ছের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার রুমে প্রবেশ করে তাঁকে টেনে হেঁচড়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আইন-শৃক্মখলা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে গুলশান কার্যালয়ে পৌঁছে দেন। এ সময় বেগম জিয়া তার ব্যবহৃত কোন মালামাল সেখান থেকে আনতে পারেননি।

সেদিন বাড়ি থেকে উচ্ছেদের খবর শুনে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ছুটে গেলে প্রধান বিচারপতি বাড়ি ছাড়তে হবে না মর্মে আইনজীবীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এটা ছিল বিচার বিভাগীয় প্রতারণা।

সেদিন ‘স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন খালেদা জিয়া’ মর্মে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিচালক একটা বিবৃতি দিয়ে

মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন।

বাড়ি ছাড়াই খালেদা জিয়া কে অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপির সাথে উপহাস করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুবুল আলম হানিফ!

বিএনপি’র তৎকালীন মহাসচিব অ্যাডভোকেট খন্দকার দেলোয়ার হোসেন তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কে বাসা থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে পরদিন ১৪ নভেম্বর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেন।

সেদিন সন্ধ্যায় বেগম খালেদা জিয়া গুলশানে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ডেকে বাড়ি থেকে কিভাবে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে তার বর্ণনা দিয়ে কেঁদে ফেলেন।টেলিভিশন চ্যানেলে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তাৎক্ষণিক পুরো পৃথিবী জুড়ে শুরু হয় নিন্দা এবং প্রতিবাদের ঝড়।যেমন পরদিন ১৪ নভেম্বর দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার পৃষ্ঠা জুড়ে শিরোনাম ‘জবরদস্তি বাড়িছাড়া খালেদা জিয়া’।

বিশেষ করে পবিত্র ঈদুল আযহার মাত্র ২/৩ দিন আগে শক্তি প্রয়োগ করে বাসা থেকে উচ্ছেদের কারণে আওয়ামী লীগ জনগণের রোষানলে পড়ে।

সেদিন পৃথিবীর একজন নেত্রী কেঁদেছেন এবং আরেকজন নেত্রী হেসেছেন । দীর্ঘদিন কারাবন্দীর পর মুক্তি পেয়ে মিয়ানমারের গণতন্ত্রের মানস কন্যা অং সান সূচী আনন্দে হেসেছেন । সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম বেগম খালেদা জিয়ার মুখে একদিন হাসি ফুটাবো।

আমি ২০০৯ সালে এসএসসি পাস করার পর ছাত্র রাজনীতির স্বার্থে চট্টগ্রামে ভর্তি না হয়ে কক্সবাজার সরকারি কলেজে ভর্তি হই। ছাত্রদলের রাজনীতিতে স্কুলজীবন থেকেই সম্পৃক্ত ছিলাম। কক্সবাজার সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আরো বেশি সক্রিয় হয়ে পড়ি। ২০০৯ সালে জেলা বিএনপির কাউন্সিল কে কেন্দ্র করে ছাত্রদল দুই গ্রুপ বিভক্ত হয়ে পড়ে। আমি বরাবরই মূলধারা অনুসরণ করতাম। জেলা ছাত্রদলের মিছিল-মিটিং করতাম তৎকালীন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সৈয়দ আহমদ উজ্জ্বল ভাইয়ের সাথে।অপরদিকে কলেজ ছাত্রদলের মিছিল-মিটিং করতাম কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মুজিব ভাইয়ের সাথে।

যেদিন বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর ৪০ বছরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়, সেদিন কক্সবাজার জেলা বিএনপির অফিস থেকে কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে আমরা মিছিল বের করতে যায়। ইতিমধ্যে টেলিভিশন চ্যানেলে

বেগম খালেদা জিয়ার হৃদয়ফাটা কান্না দেখলাম।

বেগম খালেদা জিয়ার কান্না আমি জীবনে দুইবার দেখেছি।

এক) ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর পুত্র তারেক রহমানের চিকিৎসা ও রাজনীতি নিয়ে সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন।

দুই) ৪০ বছরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে জোর করে এক কাপড়ে বের করে দেওয়ার পর তিনি সবচেয়ে বেশি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার এমন কান্না দেখে আমি সেদিন মনে মনে শপথ নিয়েছিলাম, যে শেখ হাসিনা আমার প্রাণপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়িছাড়া করেছেন,একদিন শেখ হাসিনা দেশছাড়া করবো। ইনশাআল্লাহ।

বিএনপি পরদিন সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে।জেলা বিএনপির কার্যালয়ে তৎকালীন এমপি লুৎফুর রহমান কাজল আসলেন। কিন্তু কোন বিক্ষোভ করলেন না। শুধুমাত্র দলীয় কর্মসূচির কথা তিনি সবাইকে জানিয়ে দিলেন। বেগম খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের প্রতিবাদে আমরা তাৎক্ষণিক মিছিল করলাম। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আমাদের পিছু নিল। গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিয়ে আমরা মিছিল সফল করলাম। পরদিন হরতাল পালন করতে গিয়ে সারাদেশে বিএনপি’র শতাধিক নেতা কর্মী গ্রেফতার হন।

সারা দেশের মানুষের প্রতিবাদ এবং নিন্দার ঝড় সামাল দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নতুন নাটক শুরু করলো।পুলিশ বেগম খালেদা জিয়ার বাসার মালামাল গুলো বস্তা ভরে প্যাকিং করেন। পরে গোয়েন্দার সংস্থার সহায়তায় সরকার অনুগত বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল এবং পত্রিকার গণমাধ্যমকর্মীদের ডেকে মালামালের বস্তা দেখিয়ে সরকার প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে,বেগম খালেদা জিয়া বাড়ি ছাড়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন!

শেখ হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি রাখতে গিয়ে ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আমাকে ভাইভা থেকে রহস্যজনকভাবে বাদ দেওয়া হয়েছিল। বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৪ সালের ৭এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে সরকার পতন আন্দোলনের ‘মাস্টারপ্লান’ তৈরি করার কারণে একটানা ২২ মাস রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আমি জেল খেটেছি। ২০১৮ সালে ঐতিহাসিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছি।সেবার কিছু সহযোদ্ধার ‘আপসকামি’ মনোভাবের কারণে শেখ হাসিনার পতন আমরা ঘটাতে পারিনি। তবে আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি। আমাদের আন্দোলনের কারণে সরকার প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীতে কোটা বাতিল করে ‘পরিপত্র’ জারি করতে বাধ্য হয়েছিল। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেন ৭জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।

গত ৫ জুন হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করলে আমি ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ‘আইন ও আদালতের সমন্বয়ক’ হিসেবে সেদিন প্রথম কর্মসূচী ঘোষণা করি। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা থাকার কারণে সামনের কাতারের নেতৃত্ব দিতে না পারলেও আন্দোলনের সঙ্গে ছিলাম।গত ১৯ জুন জুলাই সরকার কারফিউ জারি করলে আমরা কারফিউ ভঙ্গ করে আন্দোলন অব্যাহত রাখি।সে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

আজ ১৩ নভেম্বর। বেগম খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে দেওয়ার ১৪ বছর হয়ে গেল।

যে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়িছাড়া করেছিলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে বারবার জেলে বন্দি করেছেন,তিনি এখনো দেশে আছেন। অপরদিকে যে শেখ হাসিনা ক্ষমতার জোরে বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়িছাড়া করেছিলেন, তিনি(শেখ হাসিনা) আজ নিজেই দেশ ছাড়া!

উচ্চ আদালতের দলদাস বিচারপতি খায়রুল হক মামলা উত্থাপন করা হয়নি মর্মে ২০১০ সালের ৩০ নভেম্বর খালেদা জিয়ার আপিল খারিজ করে দেন। মইনুল রোডের এর বাড়ির সঙ্গে জিয়া পরিবারের ৪০ বছরের সম্পর্ক। আদালতের ‘অযৌক্তিক’ রায়ের কারণে সে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল। এখনো উচ্চ আদালতের রিভিউ বাকি আছে। বিএনপি চাইলে এখনো রিভিউ করার মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করতে পারে।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক।